এম.আর মাহমুদ, চকরিয়া :::
মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠির নির্মম নির্যাতনের দেশ ছাড়া রোহিঙ্গারা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিহীন নাগরিক হিসেবে বসবাস করবে বলে মনে করছে বিজ্ঞ জনেরা। এসব নাগরিক বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও পুণরায় মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আসা পুরোপুরি ফিকে হয়ে গেছে। কারণ, মিয়ানমারের পিছনে শক্তি যোগাচ্ছে বৃহৎ শক্তি চীন ও রাশিয়া। মৌন সম্মতি রয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের। মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে গিয়ে এই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির বোঝা কতদিন বাংলাদেশকে বহন করতে হয় একমাত্র আল্লাহই ভাল জানে। বিশ্বের বেশিরভাগ রাষ্ট্র মিয়ানমারের বর্বরতা ও গণহত্যা সে দেশের নাগরিকদের দেশ ছাড়া বন্ধ করতে আহ্বান জানালেও তারা এসব কর্ণপাত করছেনা। জাতিসংঘের বৈঠক হবে, বিবৃতি দেবে, কড়া প্রতিবাদ জানাবে, তাতে কিছু আসে আর যায়না। মিয়ানমারের শাসক গোষ্ঠি এসব শুনেও শুনবেনা, দেখেও দেখবেনা, কারণ তারা রোহিঙ্গাদের আবাস স্থল আরকান রাজ্য দখল করে শিল্পাঞ্চল করবে। ইতিমধ্যে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তি এলাকায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভিড়ে তিল ধারনের ঠাই নেই। ওখানকার বেশিরভাগ শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আশ্রয়হীন শিশুরা পাচ্ছেনা সু-চিকিৎসা, শিশু খাদ্য ও মায়ের দুধ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা মা-বাবার সাথে আসা ৬০% শিশুর কপালে কি আছে তা বলা যাচ্ছেনা। দেশের দানশীল ব্যক্তি, বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের ত্রাণ তৎপরতা দেখার মত। তবে এসব ত্রাণ তৎপরতায় সমন্বয়হীনতার কারণে কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছেনা। বিশেষ করে উপারের সংগতি সম্পন্ন পরিবারের লোকজন বড়ই অসহায়। তারা ত্রাণের জন্য ছুটাছুটি করতে পারছেনা। মূল্যবাদ সম্পদ গবাদি পশু থেকে সাথে আনা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা সস্তায় দালালদের কাছে বিকিয়ে দিচ্ছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় এদেশের কোটি মানুষ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের আশ্রয় নিয়েছিল। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই মুক্তিযোদ্ধায় অংশগ্রহণ করে দেশ স্বাধীন করেছে। সেইদিন ভারত এদেশের বিপন্ন লোকজনকে আশ্রয় না দিলে এদেশ স্বাধীন করা বড়ই কঠিন হত। হানাদারদের হাতে আরো অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাত তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেওয়া বেশিরভাগ মানুষই দেশে ফিরে এসেছে। অপরদিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় অসংখ্য মানুষ মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছিল আজকের হতভাগা রোহিঙ্গারা। তারাও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে ফিরে আসে। কিন্তু মিয়ানমারের আরকান থেকে পালিয়ে আসা লোকজন সেদেশে ফিরে গিয়ে পুণরায় বসবাস করতে পারবে সে আশা গুড়েবালি। কারণ, ওরা জালেম ও বর্বর। বিশ্ব সম্প্রদায় এত কিছু বলার পরও শান্তিতে নোবেল প্রাপ্ত অংসান সুচির মুখ দিয়ে এখনো পর্যন্ত শান্তির কোন ললিত বানি শুনা যাচ্ছেনা। বরং সেনাবাহিনীর সাথে তাল মিলিয়ে সন্ত্রাসী দমনের অভিযানের পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ, উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িতে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা। এক্ষেত্রে একটি প্রশ্নই জাগে যুবক শ্রেণির লোকজন কোথায়, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মতে বেশিরভাগ হত্যার শিকার অথবা আটক রয়েছে। অপরদিকে যুবতিরা হয়েছে গণহারে ধর্ষিতা। এদেরও উল্লেখ যোগ্য অংশকে হত্যা করা হয়েছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অভিমত। ইতিমধ্যে বিশ্ব সম্প্রদায় বিপন্ন রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠাচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হোছাইন মোহাম্মদ এরশাদ এমপি ও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে। বি.এন.পির পক্ষ থেকে ২২ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য নিয়ে গেলেও পুলিশ সরকারী নির্দেশে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে বাধা সৃষ্টি করেছে। অনেক চেষ্টা করেও ৩৫ হাজার মানুষের ত্রাণ সামগ্রী গন্তব্য স্থানে পৌছাতে দেয়নি। বিষয়টি সাধারণ মানুষ সহজ ভাবে নিচ্ছেনা। আরকান থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা উদ্বাস্তরা এদেশের ভোটার নয়। তাদের ভোট দেয়ার অধিকার নাই। কিন্তু বিএনপি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে মানবিক সহায়তা দিতে চেয়েছিল। কি জানি কোন কারণে এ পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে দেয়া হয়নি। এতে বিএনপির কোন ক্ষতি হয়েছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করেনা। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বিপন্ন রোহিঙ্গারা। সাথে সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হয়েছে বলে বেশির ভাগ মানুষের অভিমত। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী মহানুভবতা দেখিয়েছেন। এ মানবতার জন্য শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পেতে পারেন তিনি। তবে রোহিঙ্গাদের বোঝা অনন্তকালই বহন করতে হবে বাংলাদেশকে। যা আমাদের জন্য অনেকটা বোঝার উপর সাকের আঠির মত। ইতিমধ্যে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা নির্ধারিত এলাকা থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছে। কারণ বিভিন্ন ভাবে পালিয়ে আসা অসংখ্য রোহিঙ্গা এদেশে ভোটার তালিকাভুক্ত হয়ে নাগরিকত্ব অর্জন করেছে। এদের সনাক্ত করাও বড়ই কঠিন। মূলত রোহিঙ্গাদের জন্য বড়ই প্রয়োজন একজন কাসেম রাজারমত বিদ্রোহী নেতার। যে কাসেম রাজার নাম শুনলেই আজকের মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও সে দেশের উগ্র বৌদ্ধদের পূর্ব পুরুষদের কলিজা শুকিয়ে যেত। দাড়িয়ে ১৭ জগ পানি পান করত। আজ সেই কাসেম রাজা নেই বলে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গা মুসলমানেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এদিকে মিয়ানমার সরকারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্ঠা অংসান সুচি জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে যা বলেছে, তা শুনলেই লজ্জায় মাথা হেড হয়। তিনি স্পষ্ট দাবী করেছেন- কারো কাছ থেকে নোবেল খুজে নেয়নি, নোবেল পুরষ্কারের জন্য কাউকে ঘুষও দেয়নি। নোবেলের বেইল নেই। নোবেল আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ নয়; ঘষা দিলেই নোবেল থেকে দৈত্য বেরিয়ে আসবেনা। দুঃখ জনক হলেও সত্য অংসান সুচির মত একজন নেত্রীর মুখ দিয়ে বাংলাদেশের চাল রপ্তানির ব্যাপারে বেরসিক মন্তব্য করা হয়েছে। তিনি দাবী করেছেন বাংলাদেশে চাল দিচ্ছি সাথে রোহিঙ্গাও। আর রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বসে বসে মিয়ানমারের চাল খাচ্ছে। অংসান সুচি কি জানেনা, মেয়ানমার থেকে যে চাল বাংলাদেশে রপ্তানি করছে সে চাল ভিক্ষার চাল নয়; ক্রয় করা চাল। নিজের গদি ঠিকিয়ে রাখতে এসব সামরিক জান্তাদের শিখানো বুলি ছাড়া আর কিছুই নয়।
পাঠকের মতামত: